• চ্যারিটি ওয়ার্ক

    এক.

    বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি। কুকুর-বেড়াল জাতের বৃষ্টি । ইংরেজী মেটাফোর এর আক্ষরিক ট্রান্সলেশনের এই দিকটা খুব আমোদপূর্ন। শীতকালের এ সময়টা সচারচর বৃষ্টি হয়না। 

    বারান্দায় এসে অনেকটা গা এলিয়ে দিয়ে বসলো সাবরিনা। প্রায় দিন চারেক হল বাসার বাইরে কোথাও যায়না । অনেকটাই একঘরে হয়ে আছে। খাওয়া দাওয়া ঘুম সব কিছুই বিলাসিতার মত হয়ে গেছে। সব কিছুই কেমন যেন অসহ্য মনে হচ্ছে। একমনে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে সে।

    হঠাত তার মায়ের কন্ঠে হুশ ফিরল। তার মনে হচ্ছে কোথায় একটা যেন হারিয়ে গেছিল সে । 

    "এভাবে থাকলে আরো বদ্ধ হয়ে যাবি । তোর বন্ধুরা ফোন করেছিল। মিলির স্মরনে কিছু একটা করতে চায় ওরা ক্যাম্পাসে। তুই ওদেরকে নিয়ে  এরেঞ্জ কর বিষয়টা। তাতে মিলির আত্মা শান্তি পাবে।"

    মিলি এবং সাবরিনা। সেই প্লে থেকে একসাথেই পড়াশুনা করত। একসাথেই স্কুল, কলেজ পার করে একই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল। দূর থেকে বোঝার কোন উপায় নেই আদতে তারা বন্ধু নাকি আপন বোন। কি হয়েছিল সেদিন, কেনই বা মিলি এরকম একটা কাজ করলো কোনভাবেই সাবরিনা সেই রহস্যের জট খুলতে পারেনি এখনো। দিব্যি ভালো মানুষ এইত দিন চারেক আগেই দুজনে কত হৈ হুল্লোর করে ওয়ার্ড কাপ এর ম্যাচ দেখলো দুজন। কথা ছিল এবার সেমিস্টার ফাইনালে দুজন ঘুরতে যাবে দার্জিলিং। সেসব এখন স্বপ্ন। সেদিন ম্যাচের পরের দিন মিলির লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। তদন্ত-পোস্টমর্টেম এ এসেছে সুইসাইডাল কেস। আর ভাবতে পারছেনা সাবরিনা। কোন মতে চোখ মুছে বের হয়ে সোজা ইউনিভার্সিটির দিকে রওনা হল সে। 

    মিলির স্মরনে সাবরিনা একটা বেশ বড়সড় চ্যারিটি ইভেন্ট এর আয়োজন করেছে ক্যাম্পাসে অন্যান্য সহপাঠিদের সাথে নিয়ে।

    "Feed The Poor"

    সাথে সুইসাইডাল এওয়ারনেস নিয়েও বেশ একটা সুন্দর স্পিচ দেয় সে। সবাই তার প্রশংসাই করল বটে।



    দুই. 

    সন্ধ্যে হবে হবে ভাব। সাবরিনা ক্ষানিক আগেই বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছে সে ফিরছে একটু পরেই। ইউনিভার্সিটির ডিন নাকি কি সব এপ্রেশিয়েশন লেটার দিতে চায় চ্যারিটি ইভেন্ট এর জন্য। যদিও এ নিয়ে তার মধ্যে কোন হইচই নেই। থমথমে হয়ে আছে এখনো ভেতরটা। শোক কাটিয়ে ওঠাই মুষ্কিল হয়ে গেছে ।

    সাবরিনা বাবা মায়ের মুখে মৃদ্যু হাসি লেগে আছে। বাসার বারান্দাতে বসে তারা দুজন বৃষ্টি দেখছে। সন্ধ্যের বৃষ্টির একটা অন্যরকম স্বাদ আছে। দুজন বসে মিলির সুইসাইডের স্মৃতিচারন করছে। করবে না ই বা কেন। ছাদ থেকে মিলিকে তারাই তো ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। অথচ এমন পৈশাচিক কাজ করেও তাদের মনের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বোধ নেই । এইত সেদিন ও মিলি তাদের বাসায় আসার পর সাবরিনার মা নিজের মেয়ের মত করে আপ্যায়ন করল। কত শত গল্প , হাসাহাসি কতকিছু। অথচ আজ সব হিসেবটা উলটো হয়ে গেল। 

    সাবরিনার মা হুট করেই হাসিমুখ টা গোমড়া করে দিয়ে বলল, "কাজটা কি আমরা ঠিক করলাম আনিস?"

    সাবরিনার বাবা জবাবে বললেন, " এছাড়া আর কি বা করব বলো? আমাদের মেয়ের সিভিতে এখন মেয়েটা লিখতে পারবে সে একটা চ্যারিটির আয়োজন করেছে । মেয়েটার এনজিও জব করার অনেক ইচ্ছা, জানোনা তুমি? সোশ্যাল ওয়ার্কের প্রতি খুব ঝোক। এবার জব মার্কেটে ভালো একটা দাম পাবে। কি বলো ?"

    বলেই দুজনে অট্টোহাসি শুরু করল। পৈশাচিক অট্টহাসি।

  • 0 Comments:

    Post a Comment

    GET A FREE QUOTE NOW

    Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit, sed diam nonummy nibh euismod tincidunt ut laoreet dolore magna aliquam erat volutpat.

    Waiting At The Dawn

    Search This Blog

    Blog Archive

    Most Popular

    ADDRESS

    4759, NY 10011 Abia Martin Drive, Huston

    EMAIL

    contact-support@mail.com
    another@mail.com

    TELEPHONE

    +201 478 9800
    +501 478 9800

    MOBILE

    0177 7536213 44,
    017 775362 13